পৌষের এক বিকেল
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৬:৩০:০১ সন্ধ্যা
পৌষের এক বিকেল
সেদিন ছিল পৌষের এক ঝিম মারা বিকেল।
ধান কাটার পরের বিষন্নতাকে সাথী করে,
খড়কুটার নিস্তেজতা উড়ানো বাতাস
ভেসে এসে থমকে দাঁড়ায় আমার আঙিনায়!
এমনই এক বিকেল! যখন
সাদা বকেরা ঝিমায় কেবলি,
স্মৃতিতে ওদের জলভরা বিলের পুরনো সুখস্মৃতি।
গোবরে লেপা উঠান কৃষাণীর চোখের মত
ঝকমকে আলোর চমকে উদ্ভাসিত!
এখানে সেখানে পরে থাকা ধানের ছড়া
ঠুসি পরানো বলদের চোখে জাগায় লোভাতুর চাহনি।
নিরন্ন মানুষের হৃদয়ে নবান্নের উৎসুকতা জাগিয়ে
ফেরারী হওয়া পৌষের দিনগুলোর
এমনই এক বিকেলে প্রথম দেখা!
ঘরের দাওয়ায় দু'পা ছড়িয়ে
এক এলোকেশী যুবতির
মাথায় চিরুনী বোলানোর মুগ্ধকর তন্ময়তায়
কেটে যায় শীতের বেলা অবেলার স্বল্প প্রহর!
ওর চোখের আলোয় সেদিন আমার
বিষন্ন বিকেলগুলো হয়ে উঠে ঝলমলে!
হৃদয়ের সোনালী ধানের ছড়ায় বসে
শীষ দিয়ে যাওয়া দোয়েলগুলোকেও
বড্ড আপন মনে হয়!
নীল-সাদা লেইস ফিতায় বাঁধা
ওর দুটি বেণিতে যেন নীলাকাশ
নেমে আসে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে!
আর হরিণী দু'চোখে কালো কাজল
যেন তপ্ত মরুর বুকে স্বস্তির মেঘ-বর্ষণ!
আমায় দেখে সেই যুবতী একটু হেসে তাকায় ফিরে,
আটাশ বছরের জীবন-যৌবন মুহুর্তে স্থবির করে
নিজেই প্রবেশ করি সেই দুচোখের নীড়ে।
সাথে নিয়ে মাটির সোঁদা গন্ধ আর
ধুঁয়া ধুঁয়া কুয়াশায় বিষন্ন প্রলেপ মাখা
কোনো এক পৌষের বিকেলে।।
বিষয়: সাহিত্য
১০২২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ভালো লাগলো , এই রকম লেখা আরও চাই , ধন্যবাদ
এক সময় গ্রামেই থেকে যেতে মন চাইত। গ্রামের মাঠ-ঘাট, সেখানের তরুনী দের প্রাণচ্ছলতা আমাকে অনেক দোলা দিয়ে যেতো। কিন্তু আজন্ম ইটপাথরের নিরেট শহরে বসবাস করায় হৃদয়ের সেই আন্দোলনকে কিভাবে যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম। চিন্তার গভীরতায় কাল্পনিক সেই অনুভূতিকে কবিতার লাইনে মূর্ত করবার এক অপপ্রয়াস আর কি, লোকমান ভাই।
আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ব্লগে সাথে থেকে সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্যও অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আতীতের ক্যাঁনভাস একেঁফেলা
দুর্দান্ত্য প্রতাপে ফিরে চলা সেই দিনে
যেই দিনগুলো মনে পরে আনমনে
অসাধারন মামুন ভাই অসাধারন!!!
************************
রাতের চাদরে কষ্ট লুকিয়ে রাখি
নিরবতায় খুজি হারানো স্মৃতি
হৃদয় জ্বলে জোনাকির আলো হয়ে-
নিভু নিভু তারাদের মতো
শুধু ভাবি ফেলে আসা দিনের কথা।
কত আনন্দ স্বপ্ন দেখে ছিলাম
কত মালা গেঁথে ছিলাম-
তোমায় বাঁধবো জনম জনমের তরে-
হলোনা কোন এক অদৃশ্য লালসায়,
আজ বন্ধন হীন আমি-নেই পিছু ডাক
নেই ফিরিবার তাড়া-আমি ঘর ছাড়া।
স্বপনের ভেতর নতুন পৃথিবী দেখি
অচেনা গ্রাম নতুন মানুষ বড় আপন
কত অভিমান কত ছুটোছুটি-
যেন ফুরিয়েও ফুরায়না পথ চলা,
এভাবেই স্বপ্নের জীবন যাত্রা।
আবারো ফিরি স্বপ্নভাঙ্গা দুনিয়ায়
হতাশায় ডুবে থাকি স্মৃতির এলবাম নিয়ে
সময় যেন থেমে থেমে চলে-
কলে-কৌশলে কুড়ে কুড়ে খায়,
আমি বেঁচে থাকি-শুধু মরিবার তরে।
আর এরপরে আপনার কবিতাটি এক কথায় 'অসামান্য'!!
ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের ভিতরেও সুন্দর একটি সাহিত্যরসে আস্বাদন করাবার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ওর দুটি বেণিতে যেন নীলাকাশ
নেমে আসে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে!
আর হরিণী দু'চোখে কালো কাজল
যেন তপ্ত মরুর বুকে স্বস্তির মেঘ-বর্ষণ!
প্রাণ ছুঁয়ে গেলো লাইনগুলো পড়ে।
অনেক সুন্দর মন্তব্যটির জন্যও রইলো শুভেচ্ছা।
এমন একজন নীল-সাদা বেণিতে নীলাকাশ নেমে আসা হরিণি চোখের কেউ আপনার জীবনে চলে আসুক(যদি ইতোমধ্যে না এসে থাকে) এই কামনাই করছি।
ভালো থাকবেন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন